সংবাদ শিরোনাম
সরাইলে জোরপূর্বক রাস্তা নেওয়ার পাঁয়তারা মিথ্যা মামলায় এক স্কুল শিক্ষককে হয়রানির অভিযোগ

সরাইলে জোরপূর্বক রাস্তা নেওয়ার পাঁয়তারা মিথ্যা মামলায় এক স্কুল শিক্ষককে হয়রানির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে এক স্কুল শিক্ষককে তার প্রতিপক্ষ শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করা সহ মিথ্যা মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানী করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই শিক্ষকের দাবি তার বাড়ির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নেয়ার জন্যই তাকে তার প্রতিপক্ষ হুমকি-ধামকিসহ নানাভাবে হয়রানি করছেন।

ওই শিক্ষক দাবি করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সালিশ সভার রায়ও মানছেন না তার প্রতিপক্ষ। সম্প্রতি ওই স্কুল শিক্ষক তার দখলীয় বাড়িতে সীমানা দেওয়াল নির্মাণ করতে গেলে তার প্রতিপক্ষ মিথ্যা মামলা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। যদিও প্রতিপক্ষ তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান কোন সালিশ সভা করেননি এবং কাগজপত্র মূলেই রাস্তা তারই প্রাপ্য।
জানা গেছে, উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের অরুয়াইল গ্রামের মৃত রাজমোহন দাসের ছেলে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামচন্দ্র দাস পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে এবং এওয়াজ বদল দলিল মূলে সাবেক সেঃমেঃ ১১৬৩ দাগে হালে ২১৯৮ দাগে ১২ শতক এবং সাবেক সেঃ মেঃ ১১৬৬ দাগে হালে ২১৯৯ দাগে এক শতক মোট ১৩ শতক ভিটিবাড়ি তার নামে বিএস খতিয়ান এবং নামজারি করে দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন। 
শিক্ষক রামচন্দ্র দাসের দাবি, উল্লেখিত দু’দাগের উপর দিয়ে অতীতে কোন রাস্তা ছিলনা এবং বর্তমানেও কোন রাস্ত নেই। তিনি জানান, তার পেছনের বাড়ির (২১৯৭ দাগ) বাসিন্দা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বাদল চন্দ্র দাস তার (রামচন্দ্র দাসের) বাড়ির উত্তর পাশের ২১৯৬ দাগ এবং দক্ষিণ পাশের ২২০০ দাগের পারিবারিক রাস্তা দিয়ে চলাচল করতেন। গত কয়েক বছর আগে বাদল চন্দ্র দাস শিক্ষক রামচন্দ্র দাসের বাড়ির ২১৯৮ দাগের ওপর দিয়ে তাদের রাস্তা আছে দাবি করে স্থানীয় অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করেন।
 বাদল চন্দ্র দাসের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোশারফ হোসেন ভূইয়া ২০১৭ সালে একাধিক শুনানি করলেও কোন সুরাহা হয়নি। 
শিক্ষক রাম চন্দ্র দাস বলেন, ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট বাদল চন্দ্র দাসের বাড়িতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া সহ গন্যমান্য সালিশকারকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সালিশ সভায়ও উভয়পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তার বাড়ির ওপর দিয়ে কোন রাস্তা নেই বলে সালিশকারকগণ অভিমত দেন। 
কিন্তু বাদল চন্দ্র দাস এতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে সরাইল উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। এ সংক্রান্তে ২০১৯ সালের ১৩ জুন সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা নিবার্হী অফিসার এ.এস.এম মোসার উপস্থিতিতে শুনানি হয়। উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে ইউএনও বলেন রাম চন্দ্র দাস রাস্তা না দিলে তার করার কিছু নেই। বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার ।
রাম চন্দ্র দাসের অভিযোগ, বাদল চন্দ্র দাস তার দাবি প্রতিষ্ঠা করতে না পেরে আক্রোশবশত ২০১৯ সালের ২১ জুন কতিপয় অজ্ঞাতনামা লোকদের দিয়ে শিক্ষক রামচন্দ্র দাসের বাড়িতে অতর্কিত হামলা করিয়ে তাকে এবং তার স্ত্রীকে আহত করলে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা শেষে তিনি ২০১৯ সালের ২৮ জুন সরাইল থানায় এক অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি বলেন, গত ১৩ অক্টোবরে তার বাড়ির উত্তর দিকে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করতে গেলে প্রতিপক্ষ বাদল চন্দ্র দাস  কাজে বাধঁা দেন এবং ১৪৪ ধারায় মামলা করে তার কাজ বন্ধ করে দেন । এ ছাড়াও আরো একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানীসহ সামাজিকভাবে হেয় করছেন।
এ ব্যাপারে অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় একাধিক সালিশ সভা হলেও আমরা কোন সুরাহা দিতে পারেনি। পরে সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর সালিশ করে রায় দিয়েছিলেন। এরপর আর কেউ আমার কাছে আসেনি।
এ বিষয়ে বাদল চন্দ্র দাসের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি সোলেনামা মূলে রামচন্দ্র দাসের বাড়িতে রাস্তার এক শতক জায়গা পাওনা। সে অন্যায়ভাবে আমার জায়গা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কোন রায় দেননি বলেও তিনি দাবি করেন । 
এ ব্যাপারে তৎকালীন সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.এস.এম মোসা শুনানীর কথা স্বীকার করে বলেন, যতদূর মনে পড়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর জানান, খরিদ মূলে কিংবা উত্তরাধিকার সূত্রে  কোন ভাবেই নালিশা ভূমিতে বাদল 
চন্দ্র দাসের কোন অধিকার নেই। তারপরও মানবিক কারনে আমি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের আরো নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে শিক্ষক রাম চন্দ্র দাসের বাড়ির দক্ষিন দিক দিয়ে ৮৭ পয়েন্ট জায়গা রাস্তার জন্য ছেড়ে দেয়ার জন্য রায় করেছিলাম এবং বিনিময়ে বাদল দাস তার বাড়ি থেকে এক শতক চুয়াত্তর পয়েন্ট জায়গা ওই শিক্ষককে দেবেন। উভয়পক্ষই ওই সময় রায মেনে নেয়। এখন শুনছি বাদল চন্দ্র দাস শিক্ষক রাম চন্দ্র দাসের বাড়ির উত্তর দিক দিয়ে রাস্তা দাবি করছেন ।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর। 

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com